রাজশাহীর বাগমারার উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় অবস্থান ‘ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের। উপজেলার প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। প্রখ্যাত শিক্ষানুরাগী সাবেক এম. এন. এ শাহ মোহাম্মদ জাফরুল্লাহর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল এটি। স্থানীয় কয়েকজন বিদ্যানুরাগীর সহযোগিতা নিয়ে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভবানীগঞ্জ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। মাটির দেয়াল আর বাঁশ চালার ছাউনি দিয়ে ঘেরা কয়েকটি কক্ষে জন্য কয়েক শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহার আলী। এরপর আর পেছনে ফিরে যেতে হয়নি কলেজটিকে।
প্রথমে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান শুরু হলেও পরবর্তীতে তা ডিগ্রি পর্যায়ে উন্নীত হয়। শুধু সেখানেই ঘেমে থাকেনি। বয়সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সফলতা, পরিধি এবং উচ্চতাও বেড়েছে ভবানীগঞ্জ কলেজের। গত ২০০৯ সালে ভবানীগঞ্জ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রুপান্তর করা হয়। সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রথমে দুইটি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু হয় সম্মান শ্রেণির পাঠদান। এই গতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও চারটি বিভাগ। বর্তমানে ছয়টি (রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, সমাজকর্ম,ভূগোল ও পরিবেশ, ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি) বিষয়ে সম্মান কোর্স চালু রয়েছে। রাজশাহী উপজেলার মধ্যে সর্বপ্রথম এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সম্মান কোর্স চালু হয়।
সম্মান কোর্স চালুর মাধ্যমে কলেজটির নামকরণে পরিবর্তন আসে। নতুন নামকরণ করা হয় ভবানীগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ যা পরবর্তীতে ২০১৬ সালে জাতীয়করণের পর হয়েছে ‘ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। ২০১৮ সালে সরকারি হিসেবে গেজেট প্রকাশ হয়েছে ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের। কলেজটির বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২৮৪ জন। বিভিন্ন বিভাগের মোট ৮৫ জন শিক্ষক ও ০৯ জন কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছেন। কলেজটির সম্মান শ্রেণির ছয়টি বিভাগ বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের স্বীকৃতিও কম না। জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে কয়েক বার। দায়িত্ব নেওয়ার ০২(দুই) বছরের মধ্যেই কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মোঃ হাতেম আলীর দূরদর্শিতা ও শিক্ষার মানোন্নয়নের ফসল ঘরে আসে গত ২০১৫ সালে। এই বছরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২টি ক্যাটাগরির মানদণ্ডে বিবেচিত হয় কলেজটি। কলেজটি বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগের সরকারি-বেসরকারি কলেজ সমূহের মধ্যে চতুর্থ এবং শুধুমাত্র বেসরকারি কলেজ সমূহের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে। এর দুই বছর পর ২০১৭ সালে একই ধরনের স্বীকৃতি মেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ওই বছরে বেসরকারি কলেজ সমূহের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে।
এর সম্মাননা পুরস্কার মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর হাত থেকে গ্রহণ করেন অধ্যক্ষ। বর্তমান অধ্যক্ষের হাত ধরে সফলতা আসছে প্রতিনিয়ত। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ, স্কাউট সমাবেশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্জন রয়েছে কলেজটির। শুধু বাগমারা উপজেলা নয়, রাজশাহী অঞ্চলের মধ্যে ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ অনষ্ঠান হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে।